চলে হন্ হন্ ছোটে পন্ পন্
ঘোরে বন্ বন্ কাজে ঠন্ ঠন্
বায়ু শন্ শন্ শীতে কন্ কন্
কাশি খন্ খন্ ফোঁড়া টন্ টন্
মাছি ভন্ ভন্ থালা ঝন্ ঝন্
Wednesday, 10 March 2010
শ্রীশ্রীবর্ণ্মালাতত্ত্ব
পড় বিজ্ঞান হবে দিকজ্ঞান ঘুচিবে পথের ধাঁধা
দেখিবে গুণিয়া এ দিন দুনিয়া নিয়ম নিগড়ে বাঁধা।
কহে পন্ডিতে জড়সন্ধিতে বস্তুপিন্ড ফাঁকে
অনু অবকাশে রন্ধ্রে- রন্ধ্রে আকাশ লুকায়ে থাকে।
হেথা হেথা সেথা জড়ের পিন্ড আকাশ প্রলেপে ঢাকা
নয়কো কেবল নিরেট গাঁথন, নয়কো কেবলি ফাঁকা।
জড়ের বাঁধন বদ্ধ আকাশে, আকাশে বাঁধন জড়ে-
পৃথিবী জুড়িয়া সাগর যেমন, প্রাণটি যেমন ধড়ে।;
‘ইথার’ পাথারে তড়িত বিকারে জড়ের জীবন দোলে,
বিশ্ব – মোহের সুপ্তি ভাঙিছে সৃষ্টির কলরোলে।।
শুন শুন বার্তা নুতন, কে যেন স্বপন দিলা
ভাষা প্রাঙ্গণে স্বরে ব্যাঞ্জনে ছন্দ করেন লীলা ।
সৃষ্টি যেথায় জাগে নিরুপায় প্রলয় পয়োধি তীরে
তারি আশেপাশে অন্ধ হুতাশে আকাশ কাঁদিয়া ফিরে।
তাই ক্ষণে ক্ষণে জড়ো ব্যঞ্জনে স্বরের পরশ লাগে
তাই বারেবার মৃদু হাহাকার কলসংগীতে জাগে
স্বরব্যঞ্জন যেন দেহমনে জড়েতে চেতন বাণী
একে বিনা আর থাকিতে না পারে, প্রাণ লয়ে টানাটানি।
দোঁহি ছাড়ি দোঁহে, মূক রহে মোহে, ব্যঞ্জনে নাহি বুলি
স্বরের নিশাসে ‘আহা’ ‘উহু’ ভাষে ভাষার বারতা ভুলি।
ছিল অচেতন জগৎ যখন মগন আদিম ধুমে,
অরূপ তিমির স্তব্ধ বধির স্বপ্ন মদির ঘুমে:
আকুল গন্ধে আকাশ কুসুম উদাসে সকল দিশি,
অন্ধ জড়ের বিজন আড়ালে কে যেন রয়েছে মিশি!
স্তিমিত-স্বপ্ন স্বরের বর্ণ জড়ের বাধন ছিড়ি
ফিরে দিশাহারা কোথা ধ্রুবতারা কোথা র্স্বগের সিঁড়ি!
অ আ ই ঈ উ ঊ, হা হি হি হু হু হাল্কা শীতের হাওয়া
অলখচরণ প্রেতের চলন, নিঃশ্বাসে আসা যাওয়া ।
লেখে কি না খেলে ছায়ার আঙুলে বাতাসে বাজায় বীণা
আবেশ বিভোর আফিঙের ঘোর বস্তুত মন্ত্রহীনা।
ভাবে কুল নাই একা আসি যাই যুগে যুগে চিরদিন,
কাল হতে কালে আপনার তালে অনাহত বাধাহীন।।
অকুল অতলে অন্ধ অচলে অস্ফুট অমানিশি,
অরূপ আধারে আখি অগোচরে অনুতে অনুতে মিশি।
আসে যায় আসে অবশ আয়াশে আবেশ আকুল প্রাণে,
অতি আনমানা করে আনাগোনা অচেনা অজানা টানে,
আধো আধো ভাষা আলেয়ার আসা , আপনি আপনহারা
আদিম আলোতে আবছায়া পথে আকাশগঙ্গা- ধারা।
ইচ্ছা বিকল ইন্দ্রিয়দল, জড়িত ইন্দ্রজালে,
ঈশারা আভাসে ঈঙ্গিতে ভাষে রহ-রহ ইহকালে।
উড়ে ইতিউতি উতালা আকুতি উসখুস উকিঝুঁকি
উড়ে উচাটন, উড়ু উড়ু মন , উদাসে উধ্বমুখি।
এমন একেলা একা একা খেলা একুলে ওকুলে ফের
এপার ওপার এ যে একাকার একেরি একেলা হের।
হেরে একবার সবি একাকার একেরি এলাকা মাঝে
ঐ ওঠে শুনি, ওঙ্কার-ধ্বনি, একুলে ওকুলে বাজে।
ওরে মিথ্যা এ আকাশ-চারণ মিথ্যা তোদের খোঁজা,
স্বর্গ তোদের বস্তু সাধনে বহিতে জড়ের বোঝা।
আকাশ বিহানে বস্তু অচল, চলে না জড়ের চাকা,
আদুল আকাশে ফোকলা বাতাস কেবলি আওয়াজ ফাঁকা।
সৃষ্টিতত্ত্ব বিচার করনি শাস্ত্র পড়নি দাদা-
জড়ের পিন্ড আকাশে গুলিয়া ঠাসিবে ভাষার কাদা।
শাস্ত্রবিধান কর প্রণিধান ওরে উদাসীন অন্ধ,
ব্যঞ্জনস্বরে যেন হরিহরে কোথাও রবে না দ্বন্দ্ব।
মরমে মরমে সরম পরশে বাতাস লাগিয়ে হাড়ে,
ভাষার প্রবাহে পুলক- কম্পে জড়ের জতো ছাড়ে।
(তবে)আয় নেমে আয়, জড়ের সভায় , জীবন মরণ দোলে,
আয় নেমে আয়, ধরণীধুলায় কীর্তন কলরোলে।
আয় নেমে আয় রূপের মায়ায় অরূপ ইন্দ্রজালে
উল্কা ঝলকে থনল পুলকে আয় রে অশনিতালে।
আয় নেমে আয় কণ্ঠ্য বর্ণে কাকুতি করিছে সবে
আয় নেমে আয় র্ককশ ডাকে প্রভাতে কাকের রবে।
নামো নামো নমঃ সৃষ্টি প্রথম কারণ জলধি জলে
স্তব্দ তিমিরে প্রথম কাকলী প্রথম কৌতুহলে।
আদিম তমসে প্রথম বর্ণ কনক কিরণ মালা
প্রথম ক্ষুধিত বিশ্ব জঠরে প্রথম প্রশ্ন জ্বালা।
অকূল আঁধারে কুহকপাথারে কে আমি একেলা কবি
হেরি একাকার সকল আকার সকলি আপন ছবি ।
কহে,কই কে গো, কোথায় কবে গো ,কেন বা কাহারে ডাকি?
কহে কহ-কহ , কেন অহরহ ,কালের কবলে থাকি?
কহে কানে কানে করুণ কুজনে কলকল কত ভাষে,
কহে কোলাহলে কলহ কুহরে কাষ্ঠ কঠোর হাসে।
কহে কটঁমট কথা কাটা কাটা -কেওকেটাঁ কহ কারে ?
কাহার কদর কোকিল কণ্ঠে,কুন্দু কুসুম হারে?
কবি কল্পনে কাব্যে কলায় কাহারে করিছ সেবা
কুবের কতন কুঞ্জকাননে, কাঙালি কুটিরে কেবা ।
কায়দা কানুনে ,কার্য কারণে কীর্তিকলাপ মুলে ,
কেতাবে কোরানে কাগজে কলমে কাঁদায়ে কেরানীকুলে ।
কথা কাড়ি -কাড়ি কত কানাকড়ি কাজে কচু কাচকলা
কভু কাছাকোছা কোর্তা কলার কভু কৌপীন ঝোলা ।
কুৎসা -কথনে কুটিলে কৃপণে কুলীন কন্যাদায়ে
কর্মকান্ত কুলিম কান্ত,ক্লিষ্ট কাতর কায়ে ।
কলে কৌশলে ,কপট কোদলে ,কঠিনে কোমলে মিঠে
কেদ কুৎসিত ,কুষ্ঠ কলুষ কিলবিল কৃমি কীটে।
কহ সে কাহার কুহক পাথারু “কে আমি একেলা কবি ?
কেন একাকার সকল আকার সকলি আপন ছবি !”
‘ক’-এর কাঁদনে ,কাংস্য-ক্বণনে বর্ণ লভিল কায়া
গহন শুন্যে জড়ের ধাক্কা কালের করাল ছায়া।
সুপ্ত গগনেকরুণ বেদনে বস্তুচেতন জাগে
অকাল ক্ষুধিত খাই খাই রবে বিশ্বে তরাস লাগে
আকাশ অবধি ঠেকিল জলধি,খেয়াল জেগেছে খ্যাপা
কারে খেতে চায় খুজে নাহি পায় দেখ কি বিষম হ্যাপা!
(খালি)কর্তালে কভু কীর্তন খোলে? খোলে দাও চাটিপেটা !
নামাও আসরে ‘ক’এর দোসরে, খেঁদেলো খেদেলো খেঁটা।”
কহ মহামুনি কহ খুর শুনি ‘খ’য়ের খবর খাঁটি
খামারে খোয়ারে খানায় খন্দে খুজিনু খয়ের ঘাঁটি।
কহেন বচন খুড়ে খন্খন্ পাখালি আঁখির দিঠি
খালি খ্যাঁচাখ্যাঁচি খামচাখামচি খুঁৎখূঁতি খিটিমিটি ।
এখনো খুলেনি মুখের খোলস? এখনো খোলেনি আখি?
নিক খেয়ালে পেখম ধরিয়া, কি খেলা খেলিল পাখি!
এখনও রাখনা ক্ষুধার খবর এখনও শেখনি ভাষা
পঞ্চকোষের মুখের খোসাতে অন্ন দেখনি ঠাসা?
খোল খরতালে খোলসা খেয়ালে ‘খোল খোল খোল ‘বলে ,
শখের খাঁচার খিড়কী খুলিয়া খঞ্জ খেয়াল চলে।
সে ক্ষুধায় পাখি পেখম খুলিয়া খাঁছায় খেমটা নাচে
আখেরী ক্ষুধায় সখের ভিখারী খাস্তা খাবার যাচে-
প্রখর-ক্ষুধিত তোখড় -খেয়াল -খেপিয়া রুখিল ত্বরা,
চাখিয়া দেখিল, খাসা এ অখিল খেয়ালে-রচিত ধারা ।
খুঁজে সুখে দুখে খেয়ালের ভুলে খেয়ালে নিরখি সবি ,
খেলার খেয়ালে নিখিল -খেয়াল লিখিল খেয়াল ছবি ।
খেলার লীলা খদ্যোৎ-শিখা খেয়াল খধুপ -ধুপে’
শিখী পাখা পরে নিখুত আখরে খচিত খেয়াল রূপে ।
খোদার উপরে খোদকারী করে ওরে ও ক্ষিপ্ত মতি
কীলিয়ে অকালে কাঁঠাল পাকালে আখেরে কি হবে গতি ?
খেয়ে খুরো চাঁটি খোল কহে খাঁটি, ‘খাবি খাব ক্ষতি নাই,’
খেয়ালের বাণী করে কানাকানি – ‘গতি নাই, গতি নাই।’
নিখিল খেয়াল খসড়া খাতায় লিখিল খেয়াল ছবি
ক্ষণিকের সাথে খেয়ালের মুখে খতিয়া রাখিল সবি।
গতি কিসে হবে, চিন্তিয়া তবে বচন শুনিনু খাসা,
পঞ্চ কোষের প্রথম খোসাতে অন্ন রয়েছে ঠাসা!
আত্মার মুখে আদিম -অন্ন তাহে ব্যঞ্জনগুলি
অনুরাগে লাগি,করে ভাগাভাগি মুখে-মুখে দাও তুলি।
এত বলি ঠেলি আত্মারে তুলি তত্ত্বের লগি ধরি,
খেয়ালের প্রাণী রহে চুপ মানি বিস্ময়ে পেট ভারি ।
কবে কেবা জানে গতির গড়ানে গোপন গোমুখী হতে
কোন ভগীরথে গলাল জগতে গতির গঙ্গা স্রোতে।
দেখ আগাগোড়া গণিতের গড়া নিগূঢ় গুণ সবি
গতির আবেগে আগুয়ান বেগে অগণিত গ্রহরবি।
গগনে গগনে গোধুলি লগনে মগন গভীর গানে,
করে গমগম আগম নিগম গুরু গম্ভীর ধ্যানে।
গিরি গহ্বরে অসাধ সাগরে গঞ্জে নগরে-গ্রামে,
গাঁজার গাজনে গোষ্ঠে গহনে গোকুলে গোলকধামে।
শুনি সাবধানে কহি কানে কানে শাস্ত্রবচন ধরি
কৌশলে ঋষি কহে কখগঘ কাহারে স্মরণ করে
কয়ে দেখ জল খয়ে শুন্যতল গ’য়ে গতি অহরহ
কভূ জলে ভাসে কভূ সে আকাশে হংস যাহারে কহ ।
আঘাতে যে মারে ‘ঘ’কহি তারে হন ধাতু ‘ড’ করি
তেঁই কখগঘ কৃষ্ণে জানহ হংস-অসুর -অরি।
ব্যঙ্গে রঙ্গে ভ্রুকুটি -ভঙ্গে সঙ্গীত কলরবে
রণহুংকারে ধনুঠংকারে শংকিত কর সবে ।
বিকল অঙ্গে ভগ্নজঙঘ এ কোন পঙ্গু মুনি ?
কেন ভাঙ্গা ঠ্যাংঙে ডাঙায় নামিল বাঙালা মুলুকে শুনি।
রাঙা আঁখি জলে চাঙ্গা হয়ে বলে ডিঙাব সাগর গিরি ,
কেন ঢঙ ধরি ব্যাঙাচির মতো লাঙুল জুড়িয়া ফিরি ?
টলিল দুয়ার চিত্তগুহার চকিতে চিচিংফাক
শুনি কলকল ছুটে কোলাহল শুনি চল চল ডাক ।
চলে চঁটপট চকিত চরণ ,চোঁচা চম্পট নৃত্যে
চল চিত্রিত চিরচিন্তন চলে চঞ্চল চিত্তে।
চলে চঞ্চলা চপল চমকে,চারু চৌচির বক্রে।
চলে চন্দ্রমা চলে চরাচর চড়ি চড়কের বক্রে
চলে চকমকি চোখের চাহনে চঞ্চরী চল ছন্দ ,
চলে চিৎকার চাবুক চালনে চপট চাপড়ে চন্ড
চলে চুপি চুপি চতুর চৌর চৌদিকে চাহে ত্রস্ত
চলে চুড়ামণি চর্বে চোষ্যে চটি চৈতনে চোস্ত
চিকন চাদর চিকুর চাঁচর চোখা চালিয়াৎ চ্যাংড়া ,
চলে চ্যাংব্যাং চিতল কাতল চলে চুনোপুটি ট্যাংরা।।
ছোটে ছঁটফটি ছায়ার ছমক ছমলীলার ছলে
ছায়ারঙে মিশি ছোটে ছয় দিশি ছায়ার ছাঊনী তলে
ছোটে ছায়াবাহু পিছে পিছে পিছে ছন্দে ছুটেছে রবি
ছয় ঋতু ছোটে ছায়ার ছন্দে ছবির পিছনে ছবি
ছায়াপথ – ছায়ে জ্যোছনা বিছায়ে…
[অসমাপ্ত]
দেখিবে গুণিয়া এ দিন দুনিয়া নিয়ম নিগড়ে বাঁধা।
কহে পন্ডিতে জড়সন্ধিতে বস্তুপিন্ড ফাঁকে
অনু অবকাশে রন্ধ্রে- রন্ধ্রে আকাশ লুকায়ে থাকে।
হেথা হেথা সেথা জড়ের পিন্ড আকাশ প্রলেপে ঢাকা
নয়কো কেবল নিরেট গাঁথন, নয়কো কেবলি ফাঁকা।
জড়ের বাঁধন বদ্ধ আকাশে, আকাশে বাঁধন জড়ে-
পৃথিবী জুড়িয়া সাগর যেমন, প্রাণটি যেমন ধড়ে।;
‘ইথার’ পাথারে তড়িত বিকারে জড়ের জীবন দোলে,
বিশ্ব – মোহের সুপ্তি ভাঙিছে সৃষ্টির কলরোলে।।
শুন শুন বার্তা নুতন, কে যেন স্বপন দিলা
ভাষা প্রাঙ্গণে স্বরে ব্যাঞ্জনে ছন্দ করেন লীলা ।
সৃষ্টি যেথায় জাগে নিরুপায় প্রলয় পয়োধি তীরে
তারি আশেপাশে অন্ধ হুতাশে আকাশ কাঁদিয়া ফিরে।
তাই ক্ষণে ক্ষণে জড়ো ব্যঞ্জনে স্বরের পরশ লাগে
তাই বারেবার মৃদু হাহাকার কলসংগীতে জাগে
স্বরব্যঞ্জন যেন দেহমনে জড়েতে চেতন বাণী
একে বিনা আর থাকিতে না পারে, প্রাণ লয়ে টানাটানি।
দোঁহি ছাড়ি দোঁহে, মূক রহে মোহে, ব্যঞ্জনে নাহি বুলি
স্বরের নিশাসে ‘আহা’ ‘উহু’ ভাষে ভাষার বারতা ভুলি।
ছিল অচেতন জগৎ যখন মগন আদিম ধুমে,
অরূপ তিমির স্তব্ধ বধির স্বপ্ন মদির ঘুমে:
আকুল গন্ধে আকাশ কুসুম উদাসে সকল দিশি,
অন্ধ জড়ের বিজন আড়ালে কে যেন রয়েছে মিশি!
স্তিমিত-স্বপ্ন স্বরের বর্ণ জড়ের বাধন ছিড়ি
ফিরে দিশাহারা কোথা ধ্রুবতারা কোথা র্স্বগের সিঁড়ি!
অ আ ই ঈ উ ঊ, হা হি হি হু হু হাল্কা শীতের হাওয়া
অলখচরণ প্রেতের চলন, নিঃশ্বাসে আসা যাওয়া ।
লেখে কি না খেলে ছায়ার আঙুলে বাতাসে বাজায় বীণা
আবেশ বিভোর আফিঙের ঘোর বস্তুত মন্ত্রহীনা।
ভাবে কুল নাই একা আসি যাই যুগে যুগে চিরদিন,
কাল হতে কালে আপনার তালে অনাহত বাধাহীন।।
অকুল অতলে অন্ধ অচলে অস্ফুট অমানিশি,
অরূপ আধারে আখি অগোচরে অনুতে অনুতে মিশি।
আসে যায় আসে অবশ আয়াশে আবেশ আকুল প্রাণে,
অতি আনমানা করে আনাগোনা অচেনা অজানা টানে,
আধো আধো ভাষা আলেয়ার আসা , আপনি আপনহারা
আদিম আলোতে আবছায়া পথে আকাশগঙ্গা- ধারা।
ইচ্ছা বিকল ইন্দ্রিয়দল, জড়িত ইন্দ্রজালে,
ঈশারা আভাসে ঈঙ্গিতে ভাষে রহ-রহ ইহকালে।
উড়ে ইতিউতি উতালা আকুতি উসখুস উকিঝুঁকি
উড়ে উচাটন, উড়ু উড়ু মন , উদাসে উধ্বমুখি।
এমন একেলা একা একা খেলা একুলে ওকুলে ফের
এপার ওপার এ যে একাকার একেরি একেলা হের।
হেরে একবার সবি একাকার একেরি এলাকা মাঝে
ঐ ওঠে শুনি, ওঙ্কার-ধ্বনি, একুলে ওকুলে বাজে।
ওরে মিথ্যা এ আকাশ-চারণ মিথ্যা তোদের খোঁজা,
স্বর্গ তোদের বস্তু সাধনে বহিতে জড়ের বোঝা।
আকাশ বিহানে বস্তু অচল, চলে না জড়ের চাকা,
আদুল আকাশে ফোকলা বাতাস কেবলি আওয়াজ ফাঁকা।
সৃষ্টিতত্ত্ব বিচার করনি শাস্ত্র পড়নি দাদা-
জড়ের পিন্ড আকাশে গুলিয়া ঠাসিবে ভাষার কাদা।
শাস্ত্রবিধান কর প্রণিধান ওরে উদাসীন অন্ধ,
ব্যঞ্জনস্বরে যেন হরিহরে কোথাও রবে না দ্বন্দ্ব।
মরমে মরমে সরম পরশে বাতাস লাগিয়ে হাড়ে,
ভাষার প্রবাহে পুলক- কম্পে জড়ের জতো ছাড়ে।
(তবে)আয় নেমে আয়, জড়ের সভায় , জীবন মরণ দোলে,
আয় নেমে আয়, ধরণীধুলায় কীর্তন কলরোলে।
আয় নেমে আয় রূপের মায়ায় অরূপ ইন্দ্রজালে
উল্কা ঝলকে থনল পুলকে আয় রে অশনিতালে।
আয় নেমে আয় কণ্ঠ্য বর্ণে কাকুতি করিছে সবে
আয় নেমে আয় র্ককশ ডাকে প্রভাতে কাকের রবে।
নামো নামো নমঃ সৃষ্টি প্রথম কারণ জলধি জলে
স্তব্দ তিমিরে প্রথম কাকলী প্রথম কৌতুহলে।
আদিম তমসে প্রথম বর্ণ কনক কিরণ মালা
প্রথম ক্ষুধিত বিশ্ব জঠরে প্রথম প্রশ্ন জ্বালা।
অকূল আঁধারে কুহকপাথারে কে আমি একেলা কবি
হেরি একাকার সকল আকার সকলি আপন ছবি ।
কহে,কই কে গো, কোথায় কবে গো ,কেন বা কাহারে ডাকি?
কহে কহ-কহ , কেন অহরহ ,কালের কবলে থাকি?
কহে কানে কানে করুণ কুজনে কলকল কত ভাষে,
কহে কোলাহলে কলহ কুহরে কাষ্ঠ কঠোর হাসে।
কহে কটঁমট কথা কাটা কাটা -কেওকেটাঁ কহ কারে ?
কাহার কদর কোকিল কণ্ঠে,কুন্দু কুসুম হারে?
কবি কল্পনে কাব্যে কলায় কাহারে করিছ সেবা
কুবের কতন কুঞ্জকাননে, কাঙালি কুটিরে কেবা ।
কায়দা কানুনে ,কার্য কারণে কীর্তিকলাপ মুলে ,
কেতাবে কোরানে কাগজে কলমে কাঁদায়ে কেরানীকুলে ।
কথা কাড়ি -কাড়ি কত কানাকড়ি কাজে কচু কাচকলা
কভু কাছাকোছা কোর্তা কলার কভু কৌপীন ঝোলা ।
কুৎসা -কথনে কুটিলে কৃপণে কুলীন কন্যাদায়ে
কর্মকান্ত কুলিম কান্ত,ক্লিষ্ট কাতর কায়ে ।
কলে কৌশলে ,কপট কোদলে ,কঠিনে কোমলে মিঠে
কেদ কুৎসিত ,কুষ্ঠ কলুষ কিলবিল কৃমি কীটে।
কহ সে কাহার কুহক পাথারু “কে আমি একেলা কবি ?
কেন একাকার সকল আকার সকলি আপন ছবি !”
‘ক’-এর কাঁদনে ,কাংস্য-ক্বণনে বর্ণ লভিল কায়া
গহন শুন্যে জড়ের ধাক্কা কালের করাল ছায়া।
সুপ্ত গগনেকরুণ বেদনে বস্তুচেতন জাগে
অকাল ক্ষুধিত খাই খাই রবে বিশ্বে তরাস লাগে
আকাশ অবধি ঠেকিল জলধি,খেয়াল জেগেছে খ্যাপা
কারে খেতে চায় খুজে নাহি পায় দেখ কি বিষম হ্যাপা!
(খালি)কর্তালে কভু কীর্তন খোলে? খোলে দাও চাটিপেটা !
নামাও আসরে ‘ক’এর দোসরে, খেঁদেলো খেদেলো খেঁটা।”
কহ মহামুনি কহ খুর শুনি ‘খ’য়ের খবর খাঁটি
খামারে খোয়ারে খানায় খন্দে খুজিনু খয়ের ঘাঁটি।
কহেন বচন খুড়ে খন্খন্ পাখালি আঁখির দিঠি
খালি খ্যাঁচাখ্যাঁচি খামচাখামচি খুঁৎখূঁতি খিটিমিটি ।
এখনো খুলেনি মুখের খোলস? এখনো খোলেনি আখি?
নিক খেয়ালে পেখম ধরিয়া, কি খেলা খেলিল পাখি!
এখনও রাখনা ক্ষুধার খবর এখনও শেখনি ভাষা
পঞ্চকোষের মুখের খোসাতে অন্ন দেখনি ঠাসা?
খোল খরতালে খোলসা খেয়ালে ‘খোল খোল খোল ‘বলে ,
শখের খাঁচার খিড়কী খুলিয়া খঞ্জ খেয়াল চলে।
সে ক্ষুধায় পাখি পেখম খুলিয়া খাঁছায় খেমটা নাচে
আখেরী ক্ষুধায় সখের ভিখারী খাস্তা খাবার যাচে-
প্রখর-ক্ষুধিত তোখড় -খেয়াল -খেপিয়া রুখিল ত্বরা,
চাখিয়া দেখিল, খাসা এ অখিল খেয়ালে-রচিত ধারা ।
খুঁজে সুখে দুখে খেয়ালের ভুলে খেয়ালে নিরখি সবি ,
খেলার খেয়ালে নিখিল -খেয়াল লিখিল খেয়াল ছবি ।
খেলার লীলা খদ্যোৎ-শিখা খেয়াল খধুপ -ধুপে’
শিখী পাখা পরে নিখুত আখরে খচিত খেয়াল রূপে ।
খোদার উপরে খোদকারী করে ওরে ও ক্ষিপ্ত মতি
কীলিয়ে অকালে কাঁঠাল পাকালে আখেরে কি হবে গতি ?
খেয়ে খুরো চাঁটি খোল কহে খাঁটি, ‘খাবি খাব ক্ষতি নাই,’
খেয়ালের বাণী করে কানাকানি – ‘গতি নাই, গতি নাই।’
নিখিল খেয়াল খসড়া খাতায় লিখিল খেয়াল ছবি
ক্ষণিকের সাথে খেয়ালের মুখে খতিয়া রাখিল সবি।
গতি কিসে হবে, চিন্তিয়া তবে বচন শুনিনু খাসা,
পঞ্চ কোষের প্রথম খোসাতে অন্ন রয়েছে ঠাসা!
আত্মার মুখে আদিম -অন্ন তাহে ব্যঞ্জনগুলি
অনুরাগে লাগি,করে ভাগাভাগি মুখে-মুখে দাও তুলি।
এত বলি ঠেলি আত্মারে তুলি তত্ত্বের লগি ধরি,
খেয়ালের প্রাণী রহে চুপ মানি বিস্ময়ে পেট ভারি ।
কবে কেবা জানে গতির গড়ানে গোপন গোমুখী হতে
কোন ভগীরথে গলাল জগতে গতির গঙ্গা স্রোতে।
দেখ আগাগোড়া গণিতের গড়া নিগূঢ় গুণ সবি
গতির আবেগে আগুয়ান বেগে অগণিত গ্রহরবি।
গগনে গগনে গোধুলি লগনে মগন গভীর গানে,
করে গমগম আগম নিগম গুরু গম্ভীর ধ্যানে।
গিরি গহ্বরে অসাধ সাগরে গঞ্জে নগরে-গ্রামে,
গাঁজার গাজনে গোষ্ঠে গহনে গোকুলে গোলকধামে।
শুনি সাবধানে কহি কানে কানে শাস্ত্রবচন ধরি
কৌশলে ঋষি কহে কখগঘ কাহারে স্মরণ করে
কয়ে দেখ জল খয়ে শুন্যতল গ’য়ে গতি অহরহ
কভূ জলে ভাসে কভূ সে আকাশে হংস যাহারে কহ ।
আঘাতে যে মারে ‘ঘ’কহি তারে হন ধাতু ‘ড’ করি
তেঁই কখগঘ কৃষ্ণে জানহ হংস-অসুর -অরি।
ব্যঙ্গে রঙ্গে ভ্রুকুটি -ভঙ্গে সঙ্গীত কলরবে
রণহুংকারে ধনুঠংকারে শংকিত কর সবে ।
বিকল অঙ্গে ভগ্নজঙঘ এ কোন পঙ্গু মুনি ?
কেন ভাঙ্গা ঠ্যাংঙে ডাঙায় নামিল বাঙালা মুলুকে শুনি।
রাঙা আঁখি জলে চাঙ্গা হয়ে বলে ডিঙাব সাগর গিরি ,
কেন ঢঙ ধরি ব্যাঙাচির মতো লাঙুল জুড়িয়া ফিরি ?
টলিল দুয়ার চিত্তগুহার চকিতে চিচিংফাক
শুনি কলকল ছুটে কোলাহল শুনি চল চল ডাক ।
চলে চঁটপট চকিত চরণ ,চোঁচা চম্পট নৃত্যে
চল চিত্রিত চিরচিন্তন চলে চঞ্চল চিত্তে।
চলে চঞ্চলা চপল চমকে,চারু চৌচির বক্রে।
চলে চন্দ্রমা চলে চরাচর চড়ি চড়কের বক্রে
চলে চকমকি চোখের চাহনে চঞ্চরী চল ছন্দ ,
চলে চিৎকার চাবুক চালনে চপট চাপড়ে চন্ড
চলে চুপি চুপি চতুর চৌর চৌদিকে চাহে ত্রস্ত
চলে চুড়ামণি চর্বে চোষ্যে চটি চৈতনে চোস্ত
চিকন চাদর চিকুর চাঁচর চোখা চালিয়াৎ চ্যাংড়া ,
চলে চ্যাংব্যাং চিতল কাতল চলে চুনোপুটি ট্যাংরা।।
ছোটে ছঁটফটি ছায়ার ছমক ছমলীলার ছলে
ছায়ারঙে মিশি ছোটে ছয় দিশি ছায়ার ছাঊনী তলে
ছোটে ছায়াবাহু পিছে পিছে পিছে ছন্দে ছুটেছে রবি
ছয় ঋতু ছোটে ছায়ার ছন্দে ছবির পিছনে ছবি
ছায়াপথ – ছায়ে জ্যোছনা বিছায়ে…
[অসমাপ্ত]
শ্রীগোবিন্দ-কথা
আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ মানুষটি নই বাঁকা!
যা বলি তা ভেবেই বলি, কথায় নেইক ফাঁকা।
এখনকার সব সাহেবসুবো, সবাই আমায় চেনে
দেখ্তে চাও ত দিতে পারি সাটিফিকেট এনে।
ভাগ্য আমায় দেয়নি বটে করতে বি-এ পাশ,
তাই বলে কি সময় কাটাই কেটে ঘোড়ার ঘাস?
লোকে যে কয় বিদ্যে আমার ‘কথামালা’ই শেষ-
এর মধ্যে সত্যি কথা নেইক বিন্দুলেশ।
ওদের পাড়ার লাইব্রেরিতে কেতাব আছে যত
কেউ পড়েছে তন্নতন্ন করে আমায় মতো?
আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ এমনি পড়ার যম
পড়াশুনো নয়ক আমার কারুর চেয়ে কম।
কতকটা এই দেখেশিখে কতক পড়েশুনে,
কতক হয়ত স্বাভাবিকী প্রতিভারই গুণে
উন্নতিটা করছি যেমন আশ্চর্য তা ভারি,
নিজের মুখে সব কথা তার বলতে কি আর পারি?
বলে গেছেন চন্ডীপতি কিংবা অন্য কেউ
“আকাশ জুড়ে মেঘের বাসা, সাগরভরা ঢেউ,
জীবনটাও তেমনি ঠাসা কেবল বিনা কাজে-
যেদিক দিয়ে খরচ করি সেই খরচই বাজে!”
আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ চলতে ফিরতে শুতে
জীবনটাকে হাঁকাই নেকো মনের রথে জুতে।
হাইড্রোজেনের দুই বাবাজি অক্সিজেনের এক
নৃত্য কবেন গলাগলি কান্ডখানা দেখ্,
আহাদেতে এক্সা হলে গলে হলেন জল
এই সুযোগে সুবোধ শিশু “শ্রীগোবিন্দ” বল্।
[অসমাপ্ত]
যা বলি তা ভেবেই বলি, কথায় নেইক ফাঁকা।
এখনকার সব সাহেবসুবো, সবাই আমায় চেনে
দেখ্তে চাও ত দিতে পারি সাটিফিকেট এনে।
ভাগ্য আমায় দেয়নি বটে করতে বি-এ পাশ,
তাই বলে কি সময় কাটাই কেটে ঘোড়ার ঘাস?
লোকে যে কয় বিদ্যে আমার ‘কথামালা’ই শেষ-
এর মধ্যে সত্যি কথা নেইক বিন্দুলেশ।
ওদের পাড়ার লাইব্রেরিতে কেতাব আছে যত
কেউ পড়েছে তন্নতন্ন করে আমায় মতো?
আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ এমনি পড়ার যম
পড়াশুনো নয়ক আমার কারুর চেয়ে কম।
কতকটা এই দেখেশিখে কতক পড়েশুনে,
কতক হয়ত স্বাভাবিকী প্রতিভারই গুণে
উন্নতিটা করছি যেমন আশ্চর্য তা ভারি,
নিজের মুখে সব কথা তার বলতে কি আর পারি?
বলে গেছেন চন্ডীপতি কিংবা অন্য কেউ
“আকাশ জুড়ে মেঘের বাসা, সাগরভরা ঢেউ,
জীবনটাও তেমনি ঠাসা কেবল বিনা কাজে-
যেদিক দিয়ে খরচ করি সেই খরচই বাজে!”
আমি অর্থাৎ শ্রীগোবিন্দ চলতে ফিরতে শুতে
জীবনটাকে হাঁকাই নেকো মনের রথে জুতে।
হাইড্রোজেনের দুই বাবাজি অক্সিজেনের এক
নৃত্য কবেন গলাগলি কান্ডখানা দেখ্,
আহাদেতে এক্সা হলে গলে হলেন জল
এই সুযোগে সুবোধ শিশু “শ্রীগোবিন্দ” বল্।
[অসমাপ্ত]
শুরু
আয়রে ভোলা খেয়াল – খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে খ্যাপার গানে
নাইকো মনে নাইকো সুর।
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন্ সুদূর।
আয় খ্যাপা-মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তধিন্ ধিন্ ,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাব হীন।
আজগুবি চাল্ বেঠিক বেতাল
মাতবি মাতাল রঙ্গেতে
আয়রে তবে ভুলের ভাবে
অসম্ভবের ছন্দেতে।
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
আয় যেখানে খ্যাপার গানে
নাইকো মনে নাইকো সুর।
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
মন ভেসে যায় কোন্ সুদূর।
আয় খ্যাপা-মন ঘুচিয়ে বাঁধন
জাগিয়ে নাচন তধিন্ ধিন্ ,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
নিয়মহারা হিসাব হীন।
আজগুবি চাল্ বেঠিক বেতাল
মাতবি মাতাল রঙ্গেতে
আয়রে তবে ভুলের ভাবে
অসম্ভবের ছন্দেতে।
লক্ষী
হাত -পা- ভাঙ্গা নোংরা পুতুল মুখটি ধুলোয় মাখা,
গাল দুটি তার খাবলা মতন চোখ দুটি তার ফাঁকা-
কোথায় বা তার চুল বিনুনি, কোথায় বা তার মাথা,
আধখানি তার ছিন্ন জামা,গায় দিয়েছে কাঁথা।
পুতুলের মা ব্যস্ত কেবল তার সেবাতেই রত,
খাওয়ান শোয়ান আদর করেন ঘুম ডেকে দেন কত।
বলতে গেলাম “বিশ্রী পুতুল” অমনি বলেন রেগে -
“লক্ষ্মী পুতুল জ্বর হয়েছে তাইত এখন জেগে।”
দ্বিগুন জোরে চাপড়ে দিল “আয় আয় আয়” ব’লে-
নোংরা পুতুল লক্ষ্মী হ’য়ে পড়ল ঘুমে ঢুলে!
গাল দুটি তার খাবলা মতন চোখ দুটি তার ফাঁকা-
কোথায় বা তার চুল বিনুনি, কোথায় বা তার মাথা,
আধখানি তার ছিন্ন জামা,গায় দিয়েছে কাঁথা।
পুতুলের মা ব্যস্ত কেবল তার সেবাতেই রত,
খাওয়ান শোয়ান আদর করেন ঘুম ডেকে দেন কত।
বলতে গেলাম “বিশ্রী পুতুল” অমনি বলেন রেগে -
“লক্ষ্মী পুতুল জ্বর হয়েছে তাইত এখন জেগে।”
দ্বিগুন জোরে চাপড়ে দিল “আয় আয় আয়” ব’লে-
নোংরা পুতুল লক্ষ্মী হ’য়ে পড়ল ঘুমে ঢুলে!
মহাভারতঃ আদিপর্ব
কুরুকুলে পিতামহ ভীষ্মমহাশয়
ভুবন বিজয়ী বীর, শুন পরিচয়-
শান্তনু রাজার পুত্র নাম সত্যব্রত
জগতে সার্থক নাম সত্যে অনুরত।
স্বয়ং জননী গঙ্গা বর দিলা তাঁরে-
নিজ ইচ্ছা বিনা বীর না মরে সংসারে।
বুদ্বিভ্রংশ ঘটে হায় শান্তনু রাজার,
বিবাহের লাগি বুড়া করে আবদার।
মৎস্যরাজকন্যা আছে নামে সত্যবতী,
তারে দেখি শান্তনুর লুপ্ত হল মতি।
মৎস্যরাজ কহে, ‘রাজা, কর অবধান,
কিসের আশায় কহ করি কন্যাদান?
সত্যব্রত জ্যেষ্ঠ সেই রাজ্য অধিকারী,
আমার নাতিরা হবে তার আজ্ঞাচারি,
রাজমাতা কভু নাহি হবে সত্যবতী,
তেঁই এ বিবাহ- কথা অনুচিত অতি।’
ভগ্ন মনে হস্তিনায় ফিরিল শান্তনু
অনাহারে অনিদ্রয় জীর্ন তার তনু।
মন্ত্রী মুখে সত্যব্রত শুনি সব কথা
মৎস্যরাজপুরে গিয়া কহিল বারতা-
রাজ্যে মম সাধ নাহি, করি অঙ্গীকার
জন্মিলে তোমার নাতি রাজ্য হবে তার।’
রাজা কহে, ‘সাধুতুমি, সত্য তব বাণী,
তোমার সন্তান হতে তবু ভয় মানি।
কে জানে ভবিষ্যকথা, দৈবগতিধারা-
প্রতিবাদী হয় যদি রাজ্যলাভে তারা?’
সত্যব্রত কহে, ‘শুন প্রতিজ্ঞা আমার,
বংশ না রহিবে মম পৃথিবী মাঝার।
সাক্ষী রহ চন্দ্র সূর্য লোকে লোকান্তরে
এই জন্মে সত্যব্রত বিবাহ না করে।’
শুনিয়া অদ্ভুত বাণী ধন্য কহে লোকে,
স্বর্গ হতে পুষ্পধারা ঝরিল পলকে।
সেই হতে সত্যব্রত খ্যাত চরাচরে
ভীষণ প্রতিজ্ঞাবলে ভীষ্ম নাম ধরে।
ঘুচিল সকল বাধা, আনন্দিত চিতে
সত্যবতী রাণী হয় হস্তিনাপুরীতে।
ক্রমে হলে বর্ষ গত শান্তনুর ঘরে
জন্ম নিল নব শিশু, সবে সমাদরে।
রাখিল বিচিত্রবীর্য নামটি তাহার
শান্তনু মরিল তারে দিয়া রাজ্যভার।
অকালে বিচিত্রবীর্য মুদিলেন আঁখি
পাণ্ডু আর ধৃতরাষ্ট্র দুই পুত্র রাখি।।
হস্তিরায় চন্দ্রবংশ কুরুরাজকুল
রাজত্ব করেন সুখে বিক্রমে অতুল।
সেই কুলে জন্মি তবু দৈববশে হায়
অন্ধ বলি ধৃতরাস্ট্র রাজ্য নাহি পায়।
কনিষ্ঠ তাহার পাণ্ডু, রাজত্ব সে করে,
পাঁচটি সন্তান তার দেবতার বরে।
জ্যেষ্ঠপুত্র যুধিষ্ঠির ধীর শান্ত মন
‘সাক্ষাৎ ধর্মের পুত্র’ কহে সর্বজন।
দ্বিতীয় সে মহাবলী ভীম নাম ধরে,
পবন সমান তেজ পবনের বরে।
তৃতীয় অর্জুন বীর, ইন্দ্রের কৃপায়
রুপেগুণে শৌর্যেবীর্যে অতুল ধরায়।
এই তিন সহোদর কুন্তীর কুমার,
বিমাতা আছেন মাদ্রী দুই পুত্র তাঁর-
নকুল ও সহদেব সুজন সুশীল
এক সাথে পাঁচজনে বাড়ে তিল তিল।
অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্র শতপুত্র তার,
অভিমানী দুর্যোধন জ্যেষ্ঠ সবাকার।
পাণ্ডবেরা পাঁচ ভাই নষ্ট হয় কিসে,
এই চিন্তা করে দুষ্ট জ্বলি হিংসাবিষে।
হেনকালে সর্বজনে ভাসাইয়া শোকে
মাদ্রীসহ পান্ডরাজা যায় পরলোকে।
‘পান্ডু গেল’, মনে মনে ভাবে দুর্যোধন,
এই বারে যুধিষ্ঠির পাবে সিংহাসন!
ইচ্ছা হয় এই দণ্ডে গিয়া তারে মারি-
ভীমের ভয়েতে কিছু করিতে না পারি।
আমার কৌশলে পাকে ভীম যদি মরে
অনায়াসে যুধিষ্ঠিরে মারি তারপরে।’
কুচক্র করিয়া তবে দুষ্ট দুর্যোধন
নদীতীরে উৎসবের করে আয়োজন-
একশত পাঁচ ভাই মিলি একসাথে
আমোদ আহ্লাদে ভোজে মহানন্দে মাতে।
হেন ফাঁকে দুর্যোধন পরম যতনে
বিষের মিষ্টান্ন দেয় ভীমের বদনে।
অচেতন হল ভীম বিষের নেশায়,
সুযোগ বুঝিয়া দুষ্ট ধরিল তাহায়,
গোপনে নদীর জলে দিল ভাসাইয়া,
কেহ না জানিল কিছু উৎসবে মাতিয়া।।
এদিকে নদীর জলে ডুবিয়া অতল তলে
ভীমের অবশ দেহে ,কেমনে জানে না কেহ,
কোথায় ঠেকিল শেষে বাসুকী নাগের দেশে।
ভীমের বিশাল চাপে নাগের বসতি কাঁপে
দেহ ভারে কত মরে, কত পলাইল ডরে ,
কত নাগ দলে বলে ভীমেরে মারিতে চলে
দংশিয়া ভীমের গায় মহাবিষ ঢালে তায়।
অদ্ভুত ঘটিল তাহে ভীম চক্ষু মেলি চাহে ,
বিষে হয় বিষক্ষয় মুহুর্তে চেতনা হয়,
দেখে ভীম চারিপাশে নাগেরা ঘেরিয়া আসে
দেখিয়া ভীষণ রাগে ধরি শত শত নাগে
চূর্ণ করে বাহুবলে, মহাভয়ে নাগে দলে
ছুটে যায় হাহাকরে বাসুকী রাজার দ্বারে।
বাসুকী কহেন, ‘শোন আর ভয় নাহি কোন,
তুষি তারে সুবচনে আন হেথা সযতনে।’
রাজার আদেশে তবে আবার ফিরিয়া সবে
করে গিয়া নিবেদন বাসুকীর নিমন্ত্রণ !
শুনি ভীম কুতুহলে রাজার পুরীতে চলে ,
সেথায় ভরিয়া প্রাণ ,করিয়া অমৃত পান
বিষের যাতনা আর কিছু না রহিল তার ,
মহাঘুমে ভরপুর সব ক্লান্তি হল দুর
তখন বাসুকী তারে স্নেহভরে বারে বারে
আশিস করিয়া তায় পাঠাইল হস্তিনায় ।
সেথা ভাই চারিজনে আছে শোকাকুল মনে
কুন্তীর নয়নজল ঝরে সেথা অবিরল ,
মগন গভীর দুখে ফিরে সবে ম্লান মুখে ।
হেন কালে হারানিধি সহসা মিলালো বিধি
বিষাদ হইল দুর জাগিল হস্তিনাপুর ,
উলসিত কলরবে আনন্দে মাতিল সবে।।
ভুবন বিজয়ী বীর, শুন পরিচয়-
শান্তনু রাজার পুত্র নাম সত্যব্রত
জগতে সার্থক নাম সত্যে অনুরত।
স্বয়ং জননী গঙ্গা বর দিলা তাঁরে-
নিজ ইচ্ছা বিনা বীর না মরে সংসারে।
বুদ্বিভ্রংশ ঘটে হায় শান্তনু রাজার,
বিবাহের লাগি বুড়া করে আবদার।
মৎস্যরাজকন্যা আছে নামে সত্যবতী,
তারে দেখি শান্তনুর লুপ্ত হল মতি।
মৎস্যরাজ কহে, ‘রাজা, কর অবধান,
কিসের আশায় কহ করি কন্যাদান?
সত্যব্রত জ্যেষ্ঠ সেই রাজ্য অধিকারী,
আমার নাতিরা হবে তার আজ্ঞাচারি,
রাজমাতা কভু নাহি হবে সত্যবতী,
তেঁই এ বিবাহ- কথা অনুচিত অতি।’
ভগ্ন মনে হস্তিনায় ফিরিল শান্তনু
অনাহারে অনিদ্রয় জীর্ন তার তনু।
মন্ত্রী মুখে সত্যব্রত শুনি সব কথা
মৎস্যরাজপুরে গিয়া কহিল বারতা-
রাজ্যে মম সাধ নাহি, করি অঙ্গীকার
জন্মিলে তোমার নাতি রাজ্য হবে তার।’
রাজা কহে, ‘সাধুতুমি, সত্য তব বাণী,
তোমার সন্তান হতে তবু ভয় মানি।
কে জানে ভবিষ্যকথা, দৈবগতিধারা-
প্রতিবাদী হয় যদি রাজ্যলাভে তারা?’
সত্যব্রত কহে, ‘শুন প্রতিজ্ঞা আমার,
বংশ না রহিবে মম পৃথিবী মাঝার।
সাক্ষী রহ চন্দ্র সূর্য লোকে লোকান্তরে
এই জন্মে সত্যব্রত বিবাহ না করে।’
শুনিয়া অদ্ভুত বাণী ধন্য কহে লোকে,
স্বর্গ হতে পুষ্পধারা ঝরিল পলকে।
সেই হতে সত্যব্রত খ্যাত চরাচরে
ভীষণ প্রতিজ্ঞাবলে ভীষ্ম নাম ধরে।
ঘুচিল সকল বাধা, আনন্দিত চিতে
সত্যবতী রাণী হয় হস্তিনাপুরীতে।
ক্রমে হলে বর্ষ গত শান্তনুর ঘরে
জন্ম নিল নব শিশু, সবে সমাদরে।
রাখিল বিচিত্রবীর্য নামটি তাহার
শান্তনু মরিল তারে দিয়া রাজ্যভার।
অকালে বিচিত্রবীর্য মুদিলেন আঁখি
পাণ্ডু আর ধৃতরাষ্ট্র দুই পুত্র রাখি।।
হস্তিরায় চন্দ্রবংশ কুরুরাজকুল
রাজত্ব করেন সুখে বিক্রমে অতুল।
সেই কুলে জন্মি তবু দৈববশে হায়
অন্ধ বলি ধৃতরাস্ট্র রাজ্য নাহি পায়।
কনিষ্ঠ তাহার পাণ্ডু, রাজত্ব সে করে,
পাঁচটি সন্তান তার দেবতার বরে।
জ্যেষ্ঠপুত্র যুধিষ্ঠির ধীর শান্ত মন
‘সাক্ষাৎ ধর্মের পুত্র’ কহে সর্বজন।
দ্বিতীয় সে মহাবলী ভীম নাম ধরে,
পবন সমান তেজ পবনের বরে।
তৃতীয় অর্জুন বীর, ইন্দ্রের কৃপায়
রুপেগুণে শৌর্যেবীর্যে অতুল ধরায়।
এই তিন সহোদর কুন্তীর কুমার,
বিমাতা আছেন মাদ্রী দুই পুত্র তাঁর-
নকুল ও সহদেব সুজন সুশীল
এক সাথে পাঁচজনে বাড়ে তিল তিল।
অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্র শতপুত্র তার,
অভিমানী দুর্যোধন জ্যেষ্ঠ সবাকার।
পাণ্ডবেরা পাঁচ ভাই নষ্ট হয় কিসে,
এই চিন্তা করে দুষ্ট জ্বলি হিংসাবিষে।
হেনকালে সর্বজনে ভাসাইয়া শোকে
মাদ্রীসহ পান্ডরাজা যায় পরলোকে।
‘পান্ডু গেল’, মনে মনে ভাবে দুর্যোধন,
এই বারে যুধিষ্ঠির পাবে সিংহাসন!
ইচ্ছা হয় এই দণ্ডে গিয়া তারে মারি-
ভীমের ভয়েতে কিছু করিতে না পারি।
আমার কৌশলে পাকে ভীম যদি মরে
অনায়াসে যুধিষ্ঠিরে মারি তারপরে।’
কুচক্র করিয়া তবে দুষ্ট দুর্যোধন
নদীতীরে উৎসবের করে আয়োজন-
একশত পাঁচ ভাই মিলি একসাথে
আমোদ আহ্লাদে ভোজে মহানন্দে মাতে।
হেন ফাঁকে দুর্যোধন পরম যতনে
বিষের মিষ্টান্ন দেয় ভীমের বদনে।
অচেতন হল ভীম বিষের নেশায়,
সুযোগ বুঝিয়া দুষ্ট ধরিল তাহায়,
গোপনে নদীর জলে দিল ভাসাইয়া,
কেহ না জানিল কিছু উৎসবে মাতিয়া।।
এদিকে নদীর জলে ডুবিয়া অতল তলে
ভীমের অবশ দেহে ,কেমনে জানে না কেহ,
কোথায় ঠেকিল শেষে বাসুকী নাগের দেশে।
ভীমের বিশাল চাপে নাগের বসতি কাঁপে
দেহ ভারে কত মরে, কত পলাইল ডরে ,
কত নাগ দলে বলে ভীমেরে মারিতে চলে
দংশিয়া ভীমের গায় মহাবিষ ঢালে তায়।
অদ্ভুত ঘটিল তাহে ভীম চক্ষু মেলি চাহে ,
বিষে হয় বিষক্ষয় মুহুর্তে চেতনা হয়,
দেখে ভীম চারিপাশে নাগেরা ঘেরিয়া আসে
দেখিয়া ভীষণ রাগে ধরি শত শত নাগে
চূর্ণ করে বাহুবলে, মহাভয়ে নাগে দলে
ছুটে যায় হাহাকরে বাসুকী রাজার দ্বারে।
বাসুকী কহেন, ‘শোন আর ভয় নাহি কোন,
তুষি তারে সুবচনে আন হেথা সযতনে।’
রাজার আদেশে তবে আবার ফিরিয়া সবে
করে গিয়া নিবেদন বাসুকীর নিমন্ত্রণ !
শুনি ভীম কুতুহলে রাজার পুরীতে চলে ,
সেথায় ভরিয়া প্রাণ ,করিয়া অমৃত পান
বিষের যাতনা আর কিছু না রহিল তার ,
মহাঘুমে ভরপুর সব ক্লান্তি হল দুর
তখন বাসুকী তারে স্নেহভরে বারে বারে
আশিস করিয়া তায় পাঠাইল হস্তিনায় ।
সেথা ভাই চারিজনে আছে শোকাকুল মনে
কুন্তীর নয়নজল ঝরে সেথা অবিরল ,
মগন গভীর দুখে ফিরে সবে ম্লান মুখে ।
হেন কালে হারানিধি সহসা মিলালো বিধি
বিষাদ হইল দুর জাগিল হস্তিনাপুর ,
উলসিত কলরবে আনন্দে মাতিল সবে।।
ভারি মজা
এই নেয়েছ, ভাত খেয়েছ, ঘন্টাখানেক হবে-
আবার কেন হঠাৎ হেন নামলে এখন টবে?
একলা ঘরে ফুর্তি ভরে লুকিয়ে দুপুরবেলা,
স্নানের ছলে ঠান্ডা জলে জল ছপ্ছপ্ খেলা ।
জল ছিটিয়ে, টব পিটিয়ে, ভাবছ, “আমোদ ভারি-
কেউ কাছে নাই, যা খুশি তাই করতে এখন পারি।”
চুপ্ চুপ্ চুপ্- ঐ দুপ্ দুপ্! ঐ জেগেছে মাসি,
আসছে ধেয়ে, শুনতে পেয়ে দুষ্ট মেয়ের হাসি।
আবার কেন হঠাৎ হেন নামলে এখন টবে?
একলা ঘরে ফুর্তি ভরে লুকিয়ে দুপুরবেলা,
স্নানের ছলে ঠান্ডা জলে জল ছপ্ছপ্ খেলা ।
জল ছিটিয়ে, টব পিটিয়ে, ভাবছ, “আমোদ ভারি-
কেউ কাছে নাই, যা খুশি তাই করতে এখন পারি।”
চুপ্ চুপ্ চুপ্- ঐ দুপ্ দুপ্! ঐ জেগেছে মাসি,
আসছে ধেয়ে, শুনতে পেয়ে দুষ্ট মেয়ের হাসি।
বন্দনা
নমি সত্য সনাতন নিত্য ধনে,
নমি ভক্তিভরে নমি কায়েমনে।
নমি বিশ্বচরাচর লোকপতে
নমি সর্বজনাশ্রয় সর্বগতে।
নমি সৃষ্টি-বিধারণ শক্তিধরে,
নমি প্রাণপ্রবাহিত জীব জড়ে।
তব জ্যোতিবিভাসিত বিশ্বপটে
মহাশুন্যতলে তব নাম রটে।
কত সিন্ধুতরঙ্গিত ছন্দ ভরে
কত স্তব্ধ হিমাচল ধ্যান করে।
কত সৌরভ সঞ্চিত পুষ্পদলে
কত সূর্য বিলুন্ঠিত পাদতলে।
কত বন্দনঝঙ্কৃত ভক্তচিতে
নমি বিশ্ব বরাভয় মৃত্যুজিতে।
নমি ভক্তিভরে নমি কায়েমনে।
নমি বিশ্বচরাচর লোকপতে
নমি সর্বজনাশ্রয় সর্বগতে।
নমি সৃষ্টি-বিধারণ শক্তিধরে,
নমি প্রাণপ্রবাহিত জীব জড়ে।
তব জ্যোতিবিভাসিত বিশ্বপটে
মহাশুন্যতলে তব নাম রটে।
কত সিন্ধুতরঙ্গিত ছন্দ ভরে
কত স্তব্ধ হিমাচল ধ্যান করে।
কত সৌরভ সঞ্চিত পুষ্পদলে
কত সূর্য বিলুন্ঠিত পাদতলে।
কত বন্দনঝঙ্কৃত ভক্তচিতে
নমি বিশ্ব বরাভয় মৃত্যুজিতে।
বদ্যি বুড়ো
শুন্ছ দাদা! ঐ যে হোথায় বদ্যি বুড়ো থাকে ,
সে নাকি রোজ খাবার সময় হাত দিয়ে ভাত মাখে?
শুন্ছি নাকি খিদেও পায় সারাদিন না খেলে ?
চক্ষু নাকি আপনি বোজে ঘুমটি তেমন পেলে ?
চলতে গেলে ঠ্যাং নাকি তার ভুয়েঁর পরে ঠেকে?
কান দিয়ে সব শোনে নাকি? চোখ দিয়ে সব দেখে?
শোয় নাকি সে মুন্ডুটাকে শিয়র পানে দিয়ে?
হয় না কি হয় সত্যি মিথ্যা চল না দেখি গিয়ে!
সে নাকি রোজ খাবার সময় হাত দিয়ে ভাত মাখে?
শুন্ছি নাকি খিদেও পায় সারাদিন না খেলে ?
চক্ষু নাকি আপনি বোজে ঘুমটি তেমন পেলে ?
চলতে গেলে ঠ্যাং নাকি তার ভুয়েঁর পরে ঠেকে?
কান দিয়ে সব শোনে নাকি? চোখ দিয়ে সব দেখে?
শোয় নাকি সে মুন্ডুটাকে শিয়র পানে দিয়ে?
হয় না কি হয় সত্যি মিথ্যা চল না দেখি গিয়ে!
পড়ার হিসাব
ফির্ল সবাই ইস্কুলেতে সাঙ্গ হল ছুটি-
আবার চলে বই-বগলে সবাই গুটি গুটি।
পড়ার পরে কার কি রকম মনটি ছিল এবার,
সময় এল এখন তারই হিসেব খানা দেবার।
কেউ পড়েছেন পড়ার পুঁথি, কেউ পড়েছেন গল্প,
কেউ পড়েছেন হদ্দমতন, কেউ পড়েছেন অল্প।
কেউ বা তেড়ে গড়গড়িয়ে মুখস্থ কয় ঝাড়া,
কেউ বা কেবল কাঁচুমাঁচু মোটে না দেয় সাড়া।
গুরুমশাই এসেই কাশে বলেন, ওরে গদাই,
এবার কিছু পড়লি? নাকি খেলতি কেবল সদাই!
গদাই ভয়ে চোক পাকিয়ে ঘাবড়ে গিয়ে শেষে
বললে, “এবার পড়ার ঠেলা বেজায় সর্বনেশে-
মামার বাড়ি যেম্নি যাওয়া অম্নি গাছে চড়া,
এক্কেবারে অম্নি ধপাস্ পড়ার মত পড়া!”
আবার চলে বই-বগলে সবাই গুটি গুটি।
পড়ার পরে কার কি রকম মনটি ছিল এবার,
সময় এল এখন তারই হিসেব খানা দেবার।
কেউ পড়েছেন পড়ার পুঁথি, কেউ পড়েছেন গল্প,
কেউ পড়েছেন হদ্দমতন, কেউ পড়েছেন অল্প।
কেউ বা তেড়ে গড়গড়িয়ে মুখস্থ কয় ঝাড়া,
কেউ বা কেবল কাঁচুমাঁচু মোটে না দেয় সাড়া।
গুরুমশাই এসেই কাশে বলেন, ওরে গদাই,
এবার কিছু পড়লি? নাকি খেলতি কেবল সদাই!
গদাই ভয়ে চোক পাকিয়ে ঘাবড়ে গিয়ে শেষে
বললে, “এবার পড়ার ঠেলা বেজায় সর্বনেশে-
মামার বাড়ি যেম্নি যাওয়া অম্নি গাছে চড়া,
এক্কেবারে অম্নি ধপাস্ পড়ার মত পড়া!”
নদী
হে পর্বত, যত নদী করি নিরীক্ষণ
তোমাতেই করে তারা জনম গ্রহণ।
ছোট বড় ঢেউ সব তাদের উপরে
কল্ কল্ শব্দ করি সদা ক্রীড়া করে,
সেই নদী বেকে চুরে যায় দেশে দেশে,
সাগরেতে পড়ে গিয়া সকলের শেষে।
পথে যেতে যেতে নদী দেখে কত শোভা,
কি সুন্দর সেই সব কিবা মনোলোভা।
কোথাও কোকিলে দেখে বসি সাথী সনে,
কি সুন্দর কুহু গান গায় নিজ মনে।
কোথাও ময়ূর দেখে পাখা প্রসারিয়া
বনধারে দলে দলে আছে দাড়াইয়া!
নদীতীরে কত লোক শ্রান্তি নাশ করে,
কত শত পক্ষী আসি তথা বিচারে।
দেখিতে দেখিতে নদী মহাবেগে ধায়
কভুও সে পশ্চাতেতে ফিরে নাহি চায়।
তোমাতেই করে তারা জনম গ্রহণ।
ছোট বড় ঢেউ সব তাদের উপরে
কল্ কল্ শব্দ করি সদা ক্রীড়া করে,
সেই নদী বেকে চুরে যায় দেশে দেশে,
সাগরেতে পড়ে গিয়া সকলের শেষে।
পথে যেতে যেতে নদী দেখে কত শোভা,
কি সুন্দর সেই সব কিবা মনোলোভা।
কোথাও কোকিলে দেখে বসি সাথী সনে,
কি সুন্দর কুহু গান গায় নিজ মনে।
কোথাও ময়ূর দেখে পাখা প্রসারিয়া
বনধারে দলে দলে আছে দাড়াইয়া!
নদীতীরে কত লোক শ্রান্তি নাশ করে,
কত শত পক্ষী আসি তথা বিচারে।
দেখিতে দেখিতে নদী মহাবেগে ধায়
কভুও সে পশ্চাতেতে ফিরে নাহি চায়।
দিনের হিসাব
ভোর না হতে পাখিরা জোটে গানের চোটে ঘুমটি ছোটে-
চোখ্টি খোলো, গাত্র তোলো আরে মোলো সকাল হলো।
হায় কি দশা পড়্তে বসা অঙ্ক কষা, কলম ঘষা।
দশটা হলে হট্টগোলে দৌড়ে চলে বই বগলে!
স্কুলের পড়া বিষম তাড়া, কানটি নাড়া বেঞ্চে দাঁড়া
মরে কি বাঁচে! সমুখে পাছে বেত্র নাচে নাকের কাচে।।
খেলতে যে চায় খেল্বে কি ছাই বৈকেলে হায় সময় কি পায়?
খেলাটি ক্রমে যেম্নি জমে দখিনে বামে সন্ধ্যা নামে;
ভাঙ্ল মেলা সাধের খেলা- আবার ঠেলা সন্ধ্যাবেলা-
মুখ্টি হাঁড়ি তাড়াতাড়ি দিচ্ছে পাড়ি যে যার বাড়ি।
ঘুমের ঝোঁকে ঝাপ্সা চোখে ক্ষীণ আলোকে অঙ্ক টোকে ;
ছুটি পাবার সুযোগ আবার আয় রবিবার হপ্তা কাবার!
চোখ্টি খোলো, গাত্র তোলো আরে মোলো সকাল হলো।
হায় কি দশা পড়্তে বসা অঙ্ক কষা, কলম ঘষা।
দশটা হলে হট্টগোলে দৌড়ে চলে বই বগলে!
স্কুলের পড়া বিষম তাড়া, কানটি নাড়া বেঞ্চে দাঁড়া
মরে কি বাঁচে! সমুখে পাছে বেত্র নাচে নাকের কাচে।।
খেলতে যে চায় খেল্বে কি ছাই বৈকেলে হায় সময় কি পায়?
খেলাটি ক্রমে যেম্নি জমে দখিনে বামে সন্ধ্যা নামে;
ভাঙ্ল মেলা সাধের খেলা- আবার ঠেলা সন্ধ্যাবেলা-
মুখ্টি হাঁড়ি তাড়াতাড়ি দিচ্ছে পাড়ি যে যার বাড়ি।
ঘুমের ঝোঁকে ঝাপ্সা চোখে ক্ষীণ আলোকে অঙ্ক টোকে ;
ছুটি পাবার সুযোগ আবার আয় রবিবার হপ্তা কাবার!
টুকরো ছড়া
তিন বুড়ো পন্ডিত টাকচুড়ো নগরে
চ’ড়ে এক গামলায় পাড়ি দেয় সাগরে।
গাম্লাতে ছেঁদা আগে কেউ দেখনি,
গানখানি তাই মোর থেমে গেল এখনি।।
ম্যাও ম্যাও হুলোদাদা, তোমার যে দেখা নাই?
গেছিলাম রাজপুরী রানীমার সাথে ভাই!
“তাই নাকি? বেশ বেশ, কি দেখেছ সেখানে?”
দেখেছি ইদুর এক রানীমার উঠানে।।”
গাধাটার বুদ্ধি দেখ!- চাঁট মেরে সে নিজের গালে,
কে মেরেছে দেখবে বলে চড়তে গেছে ঘরের চালে।
ছোট ছোট ছেলেগুলো কিসে হয় তৈরি,
-কিসে হয় তৈরি,
কাদা আর কয়লা ধুলো মাটি ময়লা,
এই দিয়ে ছেলেগুলো তৈরি।
ছোট ছোট মেয়ে গুলি কিসে হয় তৈরি।
কিসে হয় তৈরি?
ক্ষীর ননী চিনি আর ভাল যাহা দুনিয়ার
মেয়েগুলি তাই দিয়ে তৈরি।।
রং হল চিঁড়েতন সব গেল ঘুলিয়ে,
গাধা যায় মামাবাড়ি টাকে হাত বুলিয়ে।
বেড়াল মরে বিষম খেয়ে, চাঁদের ধরল মাথা
হঠাৎ দেখি ঘর বাড়ি সব ময়দা দিয়ে গাঁথা।।
চ’ড়ে এক গামলায় পাড়ি দেয় সাগরে।
গাম্লাতে ছেঁদা আগে কেউ দেখনি,
গানখানি তাই মোর থেমে গেল এখনি।।
ম্যাও ম্যাও হুলোদাদা, তোমার যে দেখা নাই?
গেছিলাম রাজপুরী রানীমার সাথে ভাই!
“তাই নাকি? বেশ বেশ, কি দেখেছ সেখানে?”
দেখেছি ইদুর এক রানীমার উঠানে।।”
গাধাটার বুদ্ধি দেখ!- চাঁট মেরে সে নিজের গালে,
কে মেরেছে দেখবে বলে চড়তে গেছে ঘরের চালে।
ছোট ছোট ছেলেগুলো কিসে হয় তৈরি,
-কিসে হয় তৈরি,
কাদা আর কয়লা ধুলো মাটি ময়লা,
এই দিয়ে ছেলেগুলো তৈরি।
ছোট ছোট মেয়ে গুলি কিসে হয় তৈরি।
কিসে হয় তৈরি?
ক্ষীর ননী চিনি আর ভাল যাহা দুনিয়ার
মেয়েগুলি তাই দিয়ে তৈরি।।
রং হল চিঁড়েতন সব গেল ঘুলিয়ে,
গাধা যায় মামাবাড়ি টাকে হাত বুলিয়ে।
বেড়াল মরে বিষম খেয়ে, চাঁদের ধরল মাথা
হঠাৎ দেখি ঘর বাড়ি সব ময়দা দিয়ে গাঁথা।।
ছুটি
ছুটি! ছুটি! ছুটি!
মনের খুশি রয়না মনে হেসেই লুটোপুটি।
ঘুচল এবার পড়ার তাড়া অঙ্ক কাটাকুটি
দেখ্ব না আর পন্ডিতের ঐ রক্ত আঁখি দুটি।
আর যাব না স্কুলের পানে নিত্য গুটি গুটি
এখন থেকে কেবল খেলা কেবল ছুটোছুটি।
পাড়ার লোকের ঘুম ছুটিয়ে আয়রে সবাই জুটি
গ্রীষ্মকালের দুপুর রোদে গাছের ডালে উঠি
আয়রে সবাই হল্লা ক’রে হরেক মজা লুটি
একদিন নয় দুই দিন নয় দুই দুই মাস ছুটি।
মনের খুশি রয়না মনে হেসেই লুটোপুটি।
ঘুচল এবার পড়ার তাড়া অঙ্ক কাটাকুটি
দেখ্ব না আর পন্ডিতের ঐ রক্ত আঁখি দুটি।
আর যাব না স্কুলের পানে নিত্য গুটি গুটি
এখন থেকে কেবল খেলা কেবল ছুটোছুটি।
পাড়ার লোকের ঘুম ছুটিয়ে আয়রে সবাই জুটি
গ্রীষ্মকালের দুপুর রোদে গাছের ডালে উঠি
আয়রে সবাই হল্লা ক’রে হরেক মজা লুটি
একদিন নয় দুই দিন নয় দুই দুই মাস ছুটি।
গ্রীষ্ম
সর্বনেশে গ্রীষ্ম এসে বষর্শেষে রুদ্রবেশে
আপন ঝোঁকে বিষম রোখে আগুন ফোকে ধরার চোখে।
তাপিয়ে গগন কাঁপিয়ে ভুবন মাত্ল তপন নাচল পবন।
রৌদ্র ঝলে আকাশতলে অগ্নি জ্বলে জলে স্থলে।
ফেল্ছে আকাশ তপ্ত নিশাস ছুটছে বাতাস ঝলসিয়ে ঘাস,
ফুলের বিতান শুকনো শ্মশান যায় বুঝি প্রান হায় ভগবান।
দারুণ তৃষায় ফিরছে সবায় জল নাহি পায় হায় কি উপায়,
তাপের চোটে কথা না ফোটে হাপিয়ে ওঠে ঘর্ম ছোটে।
বৈশাখী ঝড় বাধায় রগড় করে ধড়্ফড়্ ধরার পাঁজর,
দশ দিক হয় ঘোর ধুলিময় জাগে মহাভয় হেরি সে প্রলয়।
করি তোলপাড় বাগান বাদাড় ওঠে বারবার ঘন হুন্কার,
শুনি নিয়তই থাকি থাকি ওই হাঁকে হৈ হৈ মাভৈ মাভৈঃ।
আপন ঝোঁকে বিষম রোখে আগুন ফোকে ধরার চোখে।
তাপিয়ে গগন কাঁপিয়ে ভুবন মাত্ল তপন নাচল পবন।
রৌদ্র ঝলে আকাশতলে অগ্নি জ্বলে জলে স্থলে।
ফেল্ছে আকাশ তপ্ত নিশাস ছুটছে বাতাস ঝলসিয়ে ঘাস,
ফুলের বিতান শুকনো শ্মশান যায় বুঝি প্রান হায় ভগবান।
দারুণ তৃষায় ফিরছে সবায় জল নাহি পায় হায় কি উপায়,
তাপের চোটে কথা না ফোটে হাপিয়ে ওঠে ঘর্ম ছোটে।
বৈশাখী ঝড় বাধায় রগড় করে ধড়্ফড়্ ধরার পাঁজর,
দশ দিক হয় ঘোর ধুলিময় জাগে মহাভয় হেরি সে প্রলয়।
করি তোলপাড় বাগান বাদাড় ওঠে বারবার ঘন হুন্কার,
শুনি নিয়তই থাকি থাকি ওই হাঁকে হৈ হৈ মাভৈ মাভৈঃ।
গান
১
টুটিল কি আজি ঘুমের ঘোর?
কত আর বল রবে বিভোর
পরদ্বারে গিয়ে ভিখারির সাজে
ফিরে এলি ঘৃণা অপমান লাজে,
পরের প্রত্যাশা অনুগ্রহ আশা
আর সে ভরসা কোথা রে তোর?
ঘরের সন্তান ফিরে আয় ঘরে
আয় ফিরে আয় মায়ের আদরে।
শোন্ রে শোন রে ডাকেন জননী
জন্মদুখিনী জননী তোর।
২
প্রেমের মন্দিরে তাঁর আরতি বাজে,
মিলন মধুর রাগে জীবন মাঝে।
নীরব গানে গানে পুলক প্রাণে প্রাণে
চলেছে তাঁরি পানে অরূপ সাজে।
প্রেম তুষিত সুন্দর অরুণ আলো
হৃদয় নিভুত দীপে জ্বালো রে জ্বালো ।
পুন্য মধুর ভাতি পূর্ণ মধুর রাতি,
মধুর স্বপনে মাতি মধুর রাজে।
৩
নিখিলের আনন্দ- গান এই প্রেমেরেই যুগল বন্দনায়,
জীবনের আকুল স্রোতে আকুল প্রেমের কুল নাহি পায়।
যে বিপুল প্রেমের বাণী নিখিল প্রাণের পুলক মাঝে,
এ প্রানের যুগল ধারায় সেই প্রেমেরই পরশ বাজে।
সে প্রেমের ঝরনা ঝরে এই প্রেমেরই রসের ধারায়,
নিখিলের আনন্দ-গান এই প্রেমেরই যুগল বন্দনায়।
আকাশের দিকে দিকে প্রেমের আলোর প্রদীপ জ্বলে,
সে প্রেমের উৎস জাগে এই জীবনের স্বপন- তলে।
সে প্রেমের ছন্দ উঠে প্রাণে প্রাণে আঘাত লেগে,
সে প্রেমের তরঙ্গেতে যায় ভেসে যায় ব্যাকুল বেগে।
না জানি কোন্ প্রেমিকের প্রেম জাগেরে এমন লীলায়!
নিখিলের আনন্দ- গান এই প্রেমেরই যুগল বন্দানায়।
টুটিল কি আজি ঘুমের ঘোর?
কত আর বল রবে বিভোর
পরদ্বারে গিয়ে ভিখারির সাজে
ফিরে এলি ঘৃণা অপমান লাজে,
পরের প্রত্যাশা অনুগ্রহ আশা
আর সে ভরসা কোথা রে তোর?
ঘরের সন্তান ফিরে আয় ঘরে
আয় ফিরে আয় মায়ের আদরে।
শোন্ রে শোন রে ডাকেন জননী
জন্মদুখিনী জননী তোর।
২
প্রেমের মন্দিরে তাঁর আরতি বাজে,
মিলন মধুর রাগে জীবন মাঝে।
নীরব গানে গানে পুলক প্রাণে প্রাণে
চলেছে তাঁরি পানে অরূপ সাজে।
প্রেম তুষিত সুন্দর অরুণ আলো
হৃদয় নিভুত দীপে জ্বালো রে জ্বালো ।
পুন্য মধুর ভাতি পূর্ণ মধুর রাতি,
মধুর স্বপনে মাতি মধুর রাজে।
৩
নিখিলের আনন্দ- গান এই প্রেমেরেই যুগল বন্দনায়,
জীবনের আকুল স্রোতে আকুল প্রেমের কুল নাহি পায়।
যে বিপুল প্রেমের বাণী নিখিল প্রাণের পুলক মাঝে,
এ প্রানের যুগল ধারায় সেই প্রেমেরই পরশ বাজে।
সে প্রেমের ঝরনা ঝরে এই প্রেমেরই রসের ধারায়,
নিখিলের আনন্দ-গান এই প্রেমেরই যুগল বন্দনায়।
আকাশের দিকে দিকে প্রেমের আলোর প্রদীপ জ্বলে,
সে প্রেমের উৎস জাগে এই জীবনের স্বপন- তলে।
সে প্রেমের ছন্দ উঠে প্রাণে প্রাণে আঘাত লেগে,
সে প্রেমের তরঙ্গেতে যায় ভেসে যায় ব্যাকুল বেগে।
না জানি কোন্ প্রেমিকের প্রেম জাগেরে এমন লীলায়!
নিখিলের আনন্দ- গান এই প্রেমেরই যুগল বন্দানায়।
খোকার ভাবনা
মোমের পুতুল লোমের পুতুল আগ্লে ধরে হাতে
তবুও কেন হাব্লা ছেলের মন ওঠে না তাতে?
একলা জেগে একমনেতে চুপ্টি করে বসে
আন্মনা সে কিসের তরে আঙুলখানি চোষে?
নাইকো হাসি নাইকো খেলা নাইকো মুখে কথা,
আজ সকালে হাব্লাবাবুর মন গিয়েছে কোথা?
ভাব্ছে বুঝি দুধের বোতল আস্ছে নাকো কেন?
কিংবা ভাবে মায়ের কিসে হচ্ছে দেরী হেন।
ভাব্ছে এবার দুধ খাবে না, কেবল খাবে মুড়ি,
দাদার সাথে কোঁমর বেঁধে করবে হুড়োহুড়ি
ফেল্বে ছুঁড়ে চামচটাকে পাশের বাড়ির চালে,
না হয় তেড়ে কামড়ে দেবে দুষ্ট দাদুর গালে।
কিংবা ভাবে একটা কিছু ঠুক্তে যদি পেতো-
পুতুলটাকে করত ঠুকে এক্কেবারে থেঁতো।
তবুও কেন হাব্লা ছেলের মন ওঠে না তাতে?
একলা জেগে একমনেতে চুপ্টি করে বসে
আন্মনা সে কিসের তরে আঙুলখানি চোষে?
নাইকো হাসি নাইকো খেলা নাইকো মুখে কথা,
আজ সকালে হাব্লাবাবুর মন গিয়েছে কোথা?
ভাব্ছে বুঝি দুধের বোতল আস্ছে নাকো কেন?
কিংবা ভাবে মায়ের কিসে হচ্ছে দেরী হেন।
ভাব্ছে এবার দুধ খাবে না, কেবল খাবে মুড়ি,
দাদার সাথে কোঁমর বেঁধে করবে হুড়োহুড়ি
ফেল্বে ছুঁড়ে চামচটাকে পাশের বাড়ির চালে,
না হয় তেড়ে কামড়ে দেবে দুষ্ট দাদুর গালে।
কিংবা ভাবে একটা কিছু ঠুক্তে যদি পেতো-
পুতুলটাকে করত ঠুকে এক্কেবারে থেঁতো।
খোকা ঘুমায়
কোন্খানে কোন সুদূর দেশে কোন মায়ের বুকে,
কাদের খোকা মিষ্টি এমন ঘুমোয় মনের সুখ?
অজানা কোন দেশে সেথা কোন্খানে তার ঘর?
কোন্ সমুদ্র কত নদী কত দেশের পর?
কেমন সুরে কি বলে মা ঘুমপাড়ানি গানে
খোকার চোখে নিত্যি সেথা ঘুমটি ডেকে আনে?
ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী তাদেরও কি থাকে?
‘মটি দিয়ে যাওগো’ ব’লে মা কি তাদের ডাকে?
শেয়াল আসে বেগুন খেতে, বর্গি আসে দেশে?
ঘুমের সাথে মিষ্টি মধুর মায়ের সুরটি মেশে?
খোকা জানে মায়ের মুখটি সবার চেয়ে ভালো
সবার মিষ্টি মায়ের হাসি, মায়ের চোখের আলো।
স্বপন মাঝে ছায়ার মত মায়ের মুখটি ভাসে,
তাইতে খোকা ঘুমের ঘোরে আপন মনে হাসে।
কাদের খোকা মিষ্টি এমন ঘুমোয় মনের সুখ?
অজানা কোন দেশে সেথা কোন্খানে তার ঘর?
কোন্ সমুদ্র কত নদী কত দেশের পর?
কেমন সুরে কি বলে মা ঘুমপাড়ানি গানে
খোকার চোখে নিত্যি সেথা ঘুমটি ডেকে আনে?
ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী তাদেরও কি থাকে?
‘মটি দিয়ে যাওগো’ ব’লে মা কি তাদের ডাকে?
শেয়াল আসে বেগুন খেতে, বর্গি আসে দেশে?
ঘুমের সাথে মিষ্টি মধুর মায়ের সুরটি মেশে?
খোকা জানে মায়ের মুখটি সবার চেয়ে ভালো
সবার মিষ্টি মায়ের হাসি, মায়ের চোখের আলো।
স্বপন মাঝে ছায়ার মত মায়ের মুখটি ভাসে,
তাইতে খোকা ঘুমের ঘোরে আপন মনে হাসে।
কলিকাতা কোথা রে
গিরিধি আরামপুরী, দেহ মন চিৎপাত,
খেয়ে শুয়ে হু হু করে কেটে যায় দিনরাত;
হৈ চৈ হাঙ্গামা হুড়োতাড়া হেথা নাই;
মাস বার তারিখের কোন কিছু ল্যাঠা নেই;
খিদে পেলে তেড়ে খাও, ঘুম পেলে ঘুমিও-
মোট কথা, কি আরাম, বুঝলে না তুমিও !
ভুলেই গেছিনু কোথা এই ধরা মাঝেতে
আছে যে শহর এক কলকাতা নামেতে-
হেন কালে চেয়ে দেখি চিঠি এক সমুখে,
চায়েতে অমুক দিন ভোজ দেয় অমুকে ।
‘কোথায়? কোথায়?’ বলে মন ওঠে লাফিয়ে
তাড়াতাড়ি চিঠিখানা তেড়ে ধরি চাপিয়ে,
ঠিকানাটা চেয়ে দেখি নীচু পানে ওধারে
লেখা আছে ‘কলিকাতা’ – সে আবার কোথারে !
স্মৃতি কয় ‘কলিকাতা ‘ রোস দেখি; তাই ত ,
কোথায় শুনেছি যেন , মনে ঠিক নাই ত,
বেগতিক শুধালেম সাধুরাম ধোপারে ;
সে কহিল, হলে হবে উশ্রীর ওপারে।
ওপারের জেলেবুড়ো মাথা নেড়ে কয় সে ,
‘হেন নাম শুনি নাই আমার এ বয়সে ।’
তারপরে পুছিলাম সরকারী মজুরে
তামাম মুলুক সে ত বাৎলায় ‘হুজুরে’
বেঙাবাদ বরাকর , ইদিকে পচম্বা ,
উদিকে পরেশনাথ ,পাড়ি দাও লম্বা ;
সব তার সড়গড় নেই কোন ভুল তায় -
‘কুলিকাতা কাঁহা’ বলি সেও মাথা চুলকায় !
অবশেষে নিরুপায় মাথা যায় ঘুলিয়ে ‘
‘টাইম টেবিল’ খুলি দেখি চোখ বুলয়ে ।
সেথায় পাটনা পুরী গয়া গোমো মাল্দ
বজবজ দমদম হাওড়া ও শ্যালদ -
ইত্যাদি কত নাম চেয়ে দেখি সামনেই
তার মাঝে কোন খানে কলিকাতা নাম নেই !!
-সব ফাঁকি বুজ্রুকী রসিকতা -চেষ্টা !
উদ্দেশে ‘শালা ‘ বলি গাল দিনু শেষটা।-
সহসা স্মৃতিতে যেন লাগিল কি ফুৎকার
উদিল কুমড়া হেন চাঁদপানা মুখ কার!
আশে পাশে ঢিপি ঢুপি পাহাড়ে পুঞ্জ,
মুখ চাঁচা ময়দান, মাঝে কিবা কুঞ্জ !
সে শোভা স্মরণে ঝরে নয়নের ঝরনা ;
গৃহিনীরে কহি ‘প্রিয়ে !মারা যাই ধর না ।
তার পরে দেখি ঘরে অতি ঘোর অনাচার -
রাখে না কো কেউ কোন তারিখের সমাচার !
তখনি আনিয়া পাঁজি দেখা গেল গণিয়া,
চায়ের সময় এল একেবারে ঘনিয়া !
হায়রে সময় নেই, মন কাদে হতাশে-
কোথায় চায়ের মেলা! মুখশশী কোথা সে !
স্বপন শূকায়ে যায় আধারিয়া নয়নে ,
কবিতায় গলি তাই গাহি শোক শয়নে।
খেয়ে শুয়ে হু হু করে কেটে যায় দিনরাত;
হৈ চৈ হাঙ্গামা হুড়োতাড়া হেথা নাই;
মাস বার তারিখের কোন কিছু ল্যাঠা নেই;
খিদে পেলে তেড়ে খাও, ঘুম পেলে ঘুমিও-
মোট কথা, কি আরাম, বুঝলে না তুমিও !
ভুলেই গেছিনু কোথা এই ধরা মাঝেতে
আছে যে শহর এক কলকাতা নামেতে-
হেন কালে চেয়ে দেখি চিঠি এক সমুখে,
চায়েতে অমুক দিন ভোজ দেয় অমুকে ।
‘কোথায়? কোথায়?’ বলে মন ওঠে লাফিয়ে
তাড়াতাড়ি চিঠিখানা তেড়ে ধরি চাপিয়ে,
ঠিকানাটা চেয়ে দেখি নীচু পানে ওধারে
লেখা আছে ‘কলিকাতা’ – সে আবার কোথারে !
স্মৃতি কয় ‘কলিকাতা ‘ রোস দেখি; তাই ত ,
কোথায় শুনেছি যেন , মনে ঠিক নাই ত,
বেগতিক শুধালেম সাধুরাম ধোপারে ;
সে কহিল, হলে হবে উশ্রীর ওপারে।
ওপারের জেলেবুড়ো মাথা নেড়ে কয় সে ,
‘হেন নাম শুনি নাই আমার এ বয়সে ।’
তারপরে পুছিলাম সরকারী মজুরে
তামাম মুলুক সে ত বাৎলায় ‘হুজুরে’
বেঙাবাদ বরাকর , ইদিকে পচম্বা ,
উদিকে পরেশনাথ ,পাড়ি দাও লম্বা ;
সব তার সড়গড় নেই কোন ভুল তায় -
‘কুলিকাতা কাঁহা’ বলি সেও মাথা চুলকায় !
অবশেষে নিরুপায় মাথা যায় ঘুলিয়ে ‘
‘টাইম টেবিল’ খুলি দেখি চোখ বুলয়ে ।
সেথায় পাটনা পুরী গয়া গোমো মাল্দ
বজবজ দমদম হাওড়া ও শ্যালদ -
ইত্যাদি কত নাম চেয়ে দেখি সামনেই
তার মাঝে কোন খানে কলিকাতা নাম নেই !!
-সব ফাঁকি বুজ্রুকী রসিকতা -চেষ্টা !
উদ্দেশে ‘শালা ‘ বলি গাল দিনু শেষটা।-
সহসা স্মৃতিতে যেন লাগিল কি ফুৎকার
উদিল কুমড়া হেন চাঁদপানা মুখ কার!
আশে পাশে ঢিপি ঢুপি পাহাড়ে পুঞ্জ,
মুখ চাঁচা ময়দান, মাঝে কিবা কুঞ্জ !
সে শোভা স্মরণে ঝরে নয়নের ঝরনা ;
গৃহিনীরে কহি ‘প্রিয়ে !মারা যাই ধর না ।
তার পরে দেখি ঘরে অতি ঘোর অনাচার -
রাখে না কো কেউ কোন তারিখের সমাচার !
তখনি আনিয়া পাঁজি দেখা গেল গণিয়া,
চায়ের সময় এল একেবারে ঘনিয়া !
হায়রে সময় নেই, মন কাদে হতাশে-
কোথায় চায়ের মেলা! মুখশশী কোথা সে !
স্বপন শূকায়ে যায় আধারিয়া নয়নে ,
কবিতায় গলি তাই গাহি শোক শয়নে।
Subscribe to:
Posts (Atom)