জাহাজ উঠাইবার নানারকম উপায় আছে। এক উপায়, তাহার সঙ্গে বাতাস-পোরা বড় বড় বাক্স বাঁধিয়া তাহাকে হালকা করিয়া ভাসাইয়া তোলা। আর এক উপায়, তাহার চারিদিকে দেয়াল ঘিরিয়া সেই দেয়ালের ভিতরকার সমুদ্রকে `পাম্প্' দিয়া শুকাইয়া ফেলা। রুশ-জাপান যুদ্ধের সময় জাপানীরা যখন পোর্ট আর্থার দখল করে তখন সেখানকার বন্দরে রুশেরা কতগুলা জাহাজ ডুবাইয়া দিয়াছিল। জাপানীরা দেয়াল তুলিয়া সমস্ত বন্দরের মুখ আঁটিয়া দেয়; তার পর বড়ো বড়ো কল দিয়া বন্দরের জল সেঁচিয়া ফেলিতেই জাহাজগুলা বাহির হইয়া পড়িল। জাপানীরা সেই জাহাজ আবার মেরামত করাইয়া কাজে লাগাইয়াছে।
একবার স্পেন হইতে কিছু দূরে একটি জাহাজ জখম হইয়া ডুবিতে আরম্ভ করে। জাহাজের কাপ্তান দেখিল স্পেন পর্যন্ত পৌঁছিবার আগেই জাহাজ ডুবিয়া যাইবে। জাহাজের নীচেকার খোলে হাজার মণ লবণ বোঝাই রহিয়াছে--- সকলে মিলিয়া সারাদিন লবণ ফেলিলেও তাহার কিছুই কম্তি হইবে না। তাই তিনি হুকুম দিলেন, ``জাহাজ ছাড়িতে হইবে, নৌকা নামাও।'' এমন সময় এক সালভেজ কোম্পানির জাহাজ আসিয়া হাজির--- তাহারা আসিয়াই ব্যাপার দেখিয়া জাহাজ ডুবিবার আগেই তাহা কিনিতে চাহিল। লবণ-জাহাজের কাপ্তান বলিল, ``মাঝ সমুদ্রে জাহাজ ডুবিলে কিনিয়া লাভ কি?'' সালভেজ কাপ্তান বলিল, ``জাহাজ ডুবিতে দিব না।'' শুনিয়া লবণের কাপ্তান হাসিয়া বলিল, ``আমি ত জাহাজ ছাড়িয়াই দিব --- তুমি কিনিতে চাও আমার আপত্তি কি?'' জাহাজ কিনিয়াই নূতন কাপ্তান তাহাতে জল বোঝাই করিতে লাগিল--- পুরাতন নাবিকেরা বলিল, ``আহা কর কি? একেই জাহাজ ডুবিতেছে, আবার জল চাপাইতেছ? তুমি পাগল নাকি?'' কাপ্তান কোন কথা না বলিয়া লবণের মধ্যে ক্রমাগতই জল ঢালিতে লাগিল। তারপর সমস্ত লবণ জলে গুলিয়া সেই লবণ-গোলা জলে পাম্প বসাইয়া হুড়্হুড়্ করিয়া জল সেঁচিয়া ফেলিল। জাহাজ হালকা হইয়া ভাসিয়া উঠিল। পুরাতন কাপ্তান ব্যাপার দেখিয়া আহাম্মক বনিয়া মাথা চুলকাইতে লাগিল।
No comments:
Post a Comment